শেওড়াপাড়া বাজারে কানে বাজল গিয়াস উদ্দিনের কথা। “কই কোনও কিছুর দামই তো কমল না। উল্টো বেড়েছে।” বেসরকারি চাকরিজীবী গিয়াস উদ্দিনের খরচ করতে হয় হিসাব করে। তার হিসাব মিলছে না।
তবে পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব বলছে, মূল্যস্ফীতি কমেছে। কিন্তু প্রায় প্রত্যেক পরিবার যে খাদ্যপণ্যটির ওপর নির্ভর করে থাকে, সেই ডিমের দাম যেভাবে চড়ছে, তাতে এই হিসাব কি ঠিক আছে? আওয়ামী লীগ আমলে বিবিএসের হিসাব নিয়ে সন্দেহ করত সবাই। এখনও কি তাই চলবে, প্রশ্ন তুলছেন এখন অনেকে। গিয়াস যেমন বললেন, “তাহলে কী হলো নতুন সরকার এসে? কোনও লাভ তো হলো না আমাদের।”
দেখতে দেখতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই মাস পার হয়ে গেল। বাজারের কথা চিন্তা করলে এই দুই মাসে দেশের মানুষ স্বস্তিতে ছিল, একথা যেমন বলা যাচ্ছে না; আবার আগামী দিনগুলো নিয়েও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দ্রব্যমূল্য নিয়ে ছিল মানুষের অসন্তোষ। সরকারের কার্যকর উদ্যোগ না দেখে ক্ষোভও ছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সেই সরকারের পতনের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার নানা খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্য কমিয়ে মানুষকে স্বস্তি বা শান্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ তেমন চোখে পড়ছে না। আর এতে বাজারে পণ্যমূল্য নিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের মতো ড. ইউনূস সরকারের প্রতিও মানুষের ক্ষোভ-হতাশার শেষ নেই।
এ কথা ঠিক যে, দুই মাস একটি নতুন সরকারকে বিচারের জন্য মোটেই যথেষ্ট নয়। কিন্তু যে সরকারের কাছে দেশের মানুষের অনেক অনেক আশা, অনেক স্বপ্ন, নতুন বাংলাদেশ দেখার আকাঙ্ক্ষা— সেই সরকারের প্রতিটি দিন, প্রতিটি কর্মকাণ্ড অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আর মানুষও তাদের কর্মকাণ্ড তীক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করেন; সরকারের গতিবিধি বোঝার চেষ্টা করেন; বিশ্লেষণ করেন; মূল্যায়ন করেন। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে দুই মাস মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট নয়। কিন্তু মানুষ চায় বাজারে গিয়ে যেন একটু স্বস্তি পাওয়া যায়। ৬০ দিনে তাদের এই চাওয়া পূরণ না হওয়ায় এবং আগামী দিনগুলোতে পূরণ হবে কি না— তার কোনও নিশ্চয়তা না পেয়ে গিয়াসের মতো হতাশার সুর অনেকের মুখে।
শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি দেশের সাধারণ মানুষের ক্ষোভের অন্ত ছিল না। তবে আমার বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ ছিল বাজারের আগুন নিয়ে। শেষদিকে বছরের বর বছর প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে; মানুষের নাভিঃশ্বাস উঠেছে। কম কিনেছেন; কম খেয়েছেন। অনেক মানুষের খাবারের থালায় মাছ-মাংস তো দূরে থাক, একটা ডিমও ওঠেনি। কিন্তু কঠোর কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। যারা সিন্ডিকেট করে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যার পরিণতি যা হওয়ার তাই হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালাতে হয়েছে শেখ হাসিনাকে।
ড. ইউনূস সরকারের এই দুই মাসে বাজারে কোনও পণ্যের দাম কমেনি; উল্টো বেড়েছে। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, একটি ডিম ১৫ টাকা; হালি ৬০ টাকা। শুধু ডিম নয়, চাল থেকে শুরু করে আলু, পেঁয়াজ, পটল, বেগুন, কাঁচা মরিচ সব পণ্যের দামই বেড়েছে ‘নতুন বাংলাদেশ’— এর স্বপ্ন দেখানো এই সরকারের দুই মাসে। ১০০ টাকার কমে সবজিই মিলছে না বাজারে।
কিন্তু সরকারি হিসাব গণনাকারী সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দিচ্ছে ভিন্ন তথ্য। সংস্থাটি বলছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের দুই মাসেই (আগস্ট ও সেপ্টেম্বর) দেশে মূল্যস্ফীতি বেশ খানিকটা কমেছে। অর্থাৎ এই দুই মাসে দেশের মানুষকে বাজারে গিয়ে একটু কম খরচ করতে হয়েছে; কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছে।
গত ২ অক্টোবর বিবিএস সেপ্টেম্বর মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে এক অঙ্কের ঘরে (সিঙ্গেল ডিজিট) ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে নেমে এসেছে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ হয়েছে। আর খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ।
আগের মাস আগস্টে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছিল। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে এই হার ছিল এক অঙ্কের ঘরে— ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।
সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো— গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, এই বছরের সেপ্টেম্বরে সেই পণ্য বা সেবা পেতে ১০৯ টাকা ৯২ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
গত কয়েক কয়েক বছরের মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশের সময়কাল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কোনও মাসের মূল্যস্ফীতি কমলে পরের মাসের প্রথম সপ্তাহেই তা প্রকাশ করা হয়। আবার বাড়লে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশে পরের মাসের দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
যেমন— সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি বেশ খানিকটা কমেছিল, সে কারণে মূল্যস্ফীতির সেই তথ্য প্রকাশ করা হয় দ্রুতগতিতে, অক্টোবর মাসের ২ তারিখে। আগস্ট মাসেও কমেছিল, প্রকাশ করা হয় সেপ্টেম্বর মাসের ৮ তারিখে। অন্যদিকে জুলাই মাসের মূল্যস্ফীতি বেড়েছিল, প্রকাশ করা হয় দেরিতে, আগস্ট মাসের ১২ তারিখে। শেখ হাসিনা সরকারের সময়ও এমন ঘটনা ঘটেছে।
বিবিএসের মূল্যসস্ফীতির তথ্য নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন তুলে আসছেন দেশের অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশেষ করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে এই প্রশ্ন বার বার তুলেছেন তারা। দেশের প্রায় সব অর্থনীতিবিদ বলেছেন, পরিসংখ্যান ব্যুরো মূল্যস্ফীতির যে তথ্য প্রকাশ করে বাস্তবে তা আরও বেশি। বিবিএসের মূল্যস্ফীতির তথ্যের সঙ্গে বাজারের জিনিসপত্রের দামের বাস্তব প্রতিফলন নেই।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, গত জুন মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ; খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ। তার আগের মাস মে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। যার মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ; খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১৯ শতাংশ।
সে সময় মূল্যস্ফীতি নিয়ে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছিল সরকারি অর্থায়নে পারিচালিত বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। ৯ মে প্রতিষ্ঠানটি সংবাদ সম্মেলনে করে বলেছিল, বর্তমানে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ। শুধু বিআইডিএসই নয়, দেশের সব অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থাই আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিবিএসের মূল্যস্ফীতির তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।
যে তিনজন অর্থনীতিবিদ সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করতেন, হরহামেশাই প্রশ্ন তুলতেন— তারা তিনজনই এখন অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন; যার সঙ্গে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক মূল্যস্ফীতি সরাসরি সম্পর্কিত।
এদের একজন প্রবীণ অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ; তিনি এখন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। মূল্যস্ফীতির হিসাব গণনা ও প্রকাশ করে যে সংস্থা সেই পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্থা। আরেকজন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এক সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। শেষের জন বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
এই তিন জনই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মূল্যস্ফীতি নিয়ে অনেক কথা বলেছেন; মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙাসহ নানা পরামর্শ দিয়েছেন। একইসঙ্গে বিবিএসের মূল্যস্ফীতির তথ্যে বাজারের বাস্তব প্রতিফলন নেই বলে প্রশ্ন তুলতেন।
গত সোমবার একনেক সভা শেষে সংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, “এত দিন মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব ছিল। আমার সময়ে সেটা হবে না। ব্যুরো যে পরিসংখ্যান দেবে, আমি তাতেই সই করে দেব। কী পরিসংখ্যান পেশ করা হয়েছে, সেদিকে আমি তাকাব না। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করবে। যে পরিসংখ্যান পাবে সেটাই প্রকাশ করবে।”
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের আগে কয়েক দিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাশপাশি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। পরে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে উপদেষ্টা করা হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। অন্যদিকে সালেহউদ্দিন আহমেদকে অর্থ মন্ত্রণায়ের পাশপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা করা হয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা থাকা অবস্থায় গত ১৩ আগস্ট সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, “বাড়িয়ে বা কমিয়ে নয়, এখন থেকে প্রকৃত মূল্যস্ফীতি ও জিডিপির তথ্য প্রকাশ করা হবে। অর্থনৈতিক নানান সূচকে তথ্যের গরমিল এখন থেকে আর হবে না। পরিসংখ্যান ব্যুরো যেন আরও সঠিকভাবে কাজ করতে পারে, সেদিকে নজর দেওয়া হবে।”
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লাগ (সিপিডি) বার বার বলেছে, মূল্যস্ফীতির সরকারি হিসাব বাস্তবতার সঠিক চিত্র নয়। যেমন— ২০২২ সালের ২০ মার্চ ‘পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন পথে?’ শীর্ষক আলোচনায় সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছিলেন, “নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য আকাশচুম্বী। কিন্তু সরকারি খাতায় খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত যা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায়ও কম। কিন্তু এটা বাস্তবতার তুলনায় সঠিক চিত্র নয়। নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর ক্রমাগত চাপ বাড়ছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর মূল্যস্ফীতি কমাতে সুদের হারে লাগাম তুলে নিয়ে বাজারে টাকার সরবরাহ কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। নীতি সুদহার (পলিসি রেটন বা রেপো রেট) বাড়িয়েই চলেছেন; সাড়ে ৯ শতাংশ করেছেন। এর ফলে সুদের হার বেড়েছে। মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে একটা জায়গায় স্থিতিশীল হয়েছে। কিন্তু সুদের হার ও ডলারের দামের কারণে নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের খরচ বেড়েছে। গভর্নর আশার কথা শুনিয়ে বলেছেন, ছয়-সাত মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে সহনীয় মাত্রায় নেমে আসবে।
মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতির নানা বিষয়ে গণমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি কথা বলতেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক বর্তমান গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বার বার বলতেন, বিবিএস মূল্যস্ফীতির যে তথ্য প্রকাশ করে, প্রকৃতি মূল্যস্ফীতি তার চেয়ে অনেক বেশি।
২০২২ সালে আহসান মনসুর (২৮ সেপ্টেম্বর, প্রথম আলো) বলেছিলেন, “দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কারসাজি করা হচ্ছে, তথ্য ঢেকে রাখা হচ্ছে। ৯-১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি যা-ই হোক না কেন, সেটাই প্রকাশ করা উচিৎ।”
সেটাই হওয়া উচিৎ। শুধু মূল্যস্ফীতি নয়, অর্থনীতির কোনও সূচকের তথ্য নিয়েই লুকোচুরি বা প্রকৃত তথ্য আড়াল করে বা ঘষামাজা করে অন্য তথ্য প্রকাশ করা উচিৎ নয়। এতে অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় না। সঠিক পরিকল্পনা নেওয়া যায় না। ভুল বা ইচ্ছেমতো তৈরি করা তথ্যের উপর ভিত্তি করে কোনও পরিকল্পনা বা নীতি প্রণয়ন করলে তার সুফল কখনওই ভালো হয় না।
সবার আশা ছিল অন্তবর্তী সরকারের সময় অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক মূল্যস্ফীতির প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে। কিন্তু এই সরকারের দুই মাসের (আগস্ট ও সেপ্টেম্বর) মূল্যস্ফীতির যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, তা দেখে সে আশায় গুড়েবালি বলে মনে হচ্ছে। কেননা, সরকার বলছে, সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোও তথ্য দিচ্ছে— আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি কমেছে। কিন্তু বাজারে বিদায়ী শেখ হাসিনা সরকারের সময়ের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে বলে প্রতিদিন ফলাও করে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শেষ সময়ের চেয়ে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমেছে কি না— এ প্রশ্ন যে কাউকে করা হলে গিয়াস উদ্দিন আহমেদের মতো এক বাক্যে উত্তর আসবে— মোটেও না; বরং বেড়েছে।
তাহলে কি পরিসংখ্যান ব্যুরো ভুল তথ্য দিচ্ছে অথবা সঠিক তথ্য দিচ্ছে না কিংবা প্রকৃত তথ্য আড়াল করছে— এই প্রশ্ন ড. ইউনূসের সরকারের সময়েও বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। তাহলে কি দেশবাসী মূল্যস্ফীতির প্রকৃত তথ্য কোনওদিনই পাবে না?
লেখক: সাংবাদিক।
ইমেইল: [email protected]