Beta
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪

আনার হত্যা : ২ আসামির পাসপোর্ট খুঁজতে গিয়ে মিলল মদের কারখানা

শাহীনের ফ্ল্যাটে পাওয়া যায় মদের কারখানা। ছবি : সংগৃহীত
শাহীনের ফ্ল্যাটে পাওয়া যায় মদের কারখানা। ছবি : সংগৃহীত
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যা মামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলে বিবেচিত আখতারুজ্জামান শাহীনের ঢাকার বসুন্ধরার ফ্ল্যাটে হানা দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি টিম।

ডিবি হেফাজতে থাকা এ মামলার দুই আসামির পাসপোর্টের খোঁজে সোমবার সেখানে অভিযান চালানো হলে ফ্ল্যাটটিতে একটি মদের কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, “রিমান্ডে থাকা দুই আসামি মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল আলী সাহাজী তাদের পাসপোর্ট বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় শাহীনের বাসায় রেখেছেন বলে জানান। সেখানে অভিযান চালিয়ে দুটি পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। সেই বাসাটিতে একটি মদের কারখানাও পাওয়া গেছে।“

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আখতারুজ্জামান শাহীন ঢাকায় একাধিক বাসা নিয়ে তার অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডি কারবারের পাশাপাশি নকল বিদেশি মদ বিক্রি করতেন বলে আলোচনা চলছিল।

পুলিশ বলছে, শাহীন স্ত্রী ও সন্তানসহ যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও ব্যবসার কাজে বছরের প্রায় ছয় মাস ঢাকায় থাকতেন। আর ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে তিনি এসব কারবার করতেন। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন নকল বিদেশি মদ তৈরির কারখানা। গুলশান, বনানী, বারিধারাসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তা বিক্রিও করতেন তিনি।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, বসুন্ধরার ফ্ল্যাটে শাহীন রীতিমতো মিনি বার বানিয়ে রেখেছিলেন। সেখানে আলাদার কক্ষে মদ তৈরির ব্যবস্থা আছে।

ঝিনাইদহ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনার গত ১২ মে কলকাতায় যাওয়ার পরদিনই কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিবা গার্ডেন্সের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন বলে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ২২ মে জানায়। তার লাশের সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ বলছে, হত্যার পর আনারের দেহ খণ্ড খণ্ড করে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন স্থানে।

সঞ্জিবা গাের্ডন্সের ওই ফ্ল্যাটটি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি আক্তারুজ্জামান শাহীন ভাড়া করেছিলেন। আনার কেন সেখানে গিয়েছিলেন, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। তবে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. শহীদুজ্জামানের ভাই আক্তারুজ্জামান এক সময় আনারের বন্ধু ছিলেন বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যায়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আনার হত্যার ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে শাহীনের নাম উল্লেখ করেন অতিরিক্ত কমিশনার হারুন।

তিনি বলেন, “আমাদের কাছে শাহীন মাস্টারমাইন্ড। কারণ উনিই তো তার পাসপোর্ট দিয়ে কলকাতার সঞ্জিবা গার্ডেন্সে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিল। হত্যার পরিকল্পনা, বাসা ভাড়া, এ সবই তো শাহীন করেছে।”

খুনের ছক সাজিয়ে শাহীন ১০ মে দেশে ফিরে আবার বিদেশে পাড়ি জমান বলে ডিবি জানতে পেরেছে।

এ বিষয়ে হারুন বলেন, “শাহীন কিন্তু প্রথমে দিল্লি, এরপর নেপাল তারপর দুবাই হয়ে আমেরিকা চলে যান। তিনি তো ইউএস সিটিজেন। তাকে আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা চলছে।”

আনারকে খুন করতে সাতজন সরাসরি জড়িত ছিলেন দাবি করে ওইদিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন জানান, তাদের সবাইকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তিনি জানান, ডিবি শুরুতেই গ্রেপ্তার করেছিল পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা শিমুল ভুইয়া, তার ভাতিজা তানভির ভূইয়া এবং শিলাস্তি রহমান নামে এক তরুণীকে।

গত বুধবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল আলী সাহাজীকে, যাদের পাসপোর্ট খুঁজতে সোমবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় শাহীনের ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হয়।

ওদিকে, ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার জিহাদ হাওলাদার সেখানে আছে। আর নেপালে আত্মগোপনে থাকা সিয়ামকে ঢাকার গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তারের পর কলকাতায় নেওয়া হয়েছে।

এই সাত আসামির বাইরে আরও দুজন আসামিকে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা গ্রেপ্তার করেছেন। তারা হলেন- ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু এবং ওই কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত