যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ধেয়ে আসছে শীতকালীন ঝড় ‘ব্লেয়ার’। দেশটির কর্তৃপক্ষ এই ঝড় মোকাবেলায় এরই মধ্যে সাত রাজ্যে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।
বরফ, তুষার ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই ঝড়ে দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভারি তুষারপাত ও নিম্ন তাপমাত্রা হতে পারে।
দেশটির ৩০টি রাজ্যে ৬ কোটির বেশি মানুষ আবহাওয়া সতর্কতার আওতায় রয়েছে। তাদের ভারি তুষারপাত ও তীব্র ঠাণ্ডা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা রাজ্যগুলো হলো- কেন্টাকি, ভার্জিনিয়া, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, কানসাস, আরকানসাস এবং মিসৌরি রাজ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। নিউ জার্সি রাজ্যের আটলান্টিক, বার্লিংটন, ক্যামডেন, কেপ মে, কাম্বারল্যান্ড, গ্লুসেস্টার এবং সালেমসহ কয়েকটি কাউন্টিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
দ্য ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (এনডব্লিউএস) জানিয়েছে, ঝড়ের পর বরফশীতল আর্কটিক বাতাস প্রবেশ করবে। সোমবার ও মঙ্গলবার দিনের তাপমাত্রা গ্রেট প্লেইন্স থেকে পূর্ব উপকূল পর্যন্ত গড় তাপমাত্রার চেয়ে ১০ থেকে ২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট কম থাকবে।
ভার্জিনিয়া, ইন্ডিয়ানা, কানসাস ও কেন্টাকিতে শত শত গাড়ি দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। কেন্টাকিতে এক পুলিশ সদস্যের পেট্রোল গাড়ি ইন্টারস্টেট ৬৫-এ আঘাতপ্রাপ্ত হলে তিনি আহত হন। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। মিসৌরিতে অন্তত ৬০০ গাড়িচালক রাস্তার মধ্যে আটকা পড়েছেন বলে রাজ্যের পুলিশ জানিয়েছে।
তীব্র তুষারপাত ও বৃষ্টির কারণে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে লক্ষাধিক যাত্রীর ভ্রমণে অসুবিধা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে রবিবার শীতল আবহাওয়ার কারণে এক হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল ও ৩ হাজারের বেশি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে।
কানসাস সিটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বরফের কারণে সাময়িকভাবে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই ঝড় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। চরম আবহাওয়া রাস্তা, ভবন ও যানবাহনের মতো অবকাঠামোর ক্ষতি করে। এছাড়া শীতকালীন ঝড়ে স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যক্রমও বিঘ্নিত হয়।
বিদ্যুৎ বিভ্রাট, রাস্তা বন্ধ ও ভ্রমণ বাতিল হওয়ায় অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়। সেবাখাত হুমকির মুখে পড়ে। সীমিত কর্মী নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাতে হয়।
২০২৪ সালের জানুয়ারির ঝড়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়। ২০২৩ সালে এই ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। আর ২০২২ সালে ৯ বিলিয়ন ও ২০২১ সালে ২৭ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছিল।
এবারের ঝড়ে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে কানসাস ও মিসৌরি রাজ্যে। রবিবার দুপুর নাগাদ ওই দুই রাজ্যের কিছু এলাকায় ১০ ইঞ্চির বেশি তুষারপাত রেকর্ড করা হয়। কানসাসের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব সহাসড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কানসাস সিটির কর্মকর্তা ব্রায়ান প্লাট এনবিসি নিউজকে বলেন, “গত ৩২ বছরে আমরা ১০ ইঞ্চির বেশি তুষারপাত দেখিনি।”
দক্ষিণ ওহাইও থেকে ওয়াশিংটন পর্যন্ত মোট ছয় থেকে ১২ ইঞ্চি তুষারপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঝড়ের কারণে সোমবার শত শত স্কুল না খোলার ঘোষণা দিয়েছে, যার মধ্যে ইন্ডিয়ানাপলিস, সিনসিনাটি, ওয়াশিংটন এবং ফিলাডেলফিয়ার পাবলিক স্কুলও রয়েছে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি, এনবিসি।