সাফজয়ী মেয়ে ফুটবলারদের সঙ্গে বাফুফের মহিলা উইংয়ের দূরত্ব বেড়েই চলছে। মহিলা উইং মনোযোগী পুনঃনিয়োগ দেওয়া কোচ পিটার বাটলারে। কিন্তু এই ব্রিটিশ কোচের ট্রেনিং বয়কটের সিদ্ধান্তে অনড় মেয়ে ফুটবলাররা। তারা সাড়া দিচ্ছেন না এই কোচের ডাকে। এদিকে বাফুফের মহিলা উইংয়ের চেয়ারম্যান তাদের হুমকি দিয়ে কঠোর হাতে বিদ্রোহ দমনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জবাবে এই চ্যাম্পিয়ন ফুটবলাররা অবসরে যাওয়ার কথা ভাবছেন!
সাফ ফুটবল জয়ের আড়াই মাস পর বাফুফে আবার মেয়ে ফুটবলের কর্মকান্ড শুরু করতে গিয়ে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। তাদের ডাকে মেয়ে ফুটবলাররা ক্যাম্পে ফিরলেও কোচ বাটলারের সঙ্গে তারা সভায় বসেননি। এই ব্রিটিশ কোচের ট্রেনিং বর্জন করছেন তারা। সাফজয়ী দলের এক ফুটবলার জানিয়েছেন, “বাটলারকে নিয়ে আমাদের আপত্তি আছে, এটা জানার পরও বাফুফে তাকে নারী দলের দায়িত্ব দিয়েছে। তিনি বাদে আমরা অন্য যে কোনও কোচের অধীনে ট্রেনিং করবো।”
মেয়েদের সঙ্গে বাটলারের দূরত্ব শুরু হয় সাফ ফুটবল থেকে। অক্টোবরে কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই মারিয়া, মাসুরা, কৃষ্ণার মতো সিনিয়রদের বাদ দিয়ে একাদশ সাজিয়েছিলেন এই কোচ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই ম্যাচ হারতে হারতেই কোনোরকমে ড্র করে বাংলাদেশ। অনাকাঙ্খিত ড্রয়ের পরই মনিকা চাকমা প্রকাশ্যে আনেন বাটলারের সিনিয়র ফুটবলারদের অপছন্দের কথা। এরপর ফুটবলারদের চ্যালেঞ্জের মুখে ভারতের ম্যাচে কোচ সিনিয়রদের নিয়েই একাদশ সাজাতে বাধ্য হয়েছিলেন। এবং দারুণ জয়ে তার ফল মেলে। ফাইনালে নেপালকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় বারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়ন হয় সাবিনা-ঋতুপর্ণারা। নৈতিকভাবে এই বিজয়িনীদের কাছে হার মানতে হয়েছিল বাটলারকে।
এরপরও বাফুফে নতুন করে এই ব্রিটিশ কোচকে নিয়োগ দেয় দুই বছরের জন্য। এখানেই মেয়েদের আপত্তি। কিন্তু বাফুফের দাবি হচ্ছে, তারা বাটলারকে দিয়েই চালাবে মেয়েদের ফুটবল। এজন্য এক বাফুফে কর্তাকে দিয়ে মেয়েদের বেশ হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। মেয়েদের ঐক্যে ফাটল ধরানোর জন্য ১৮ জনকে কারণ দর্শাও নোটিশ পাঠানোরও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
তবে মহিলা উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ দাবি করেছেন, “শোকজ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমরা চেষ্টা করছি পরিবেশ যেন শান্ত থাকে। মেয়েরা যেন অনুশীলনে ফেরে। আমরা যখন কোনও সিদ্ধান্ত নেবো তখন আপনাদের জানাবো।” সঙ্গে তিনি যোগ করেন, “তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেছি, একইসঙ্গে কথা চলছে বাটলারের সঙ্গেও। সারাদিন আজ এ নিয়ে কাজ করেছি আমরা।”
বাফুফে কারণ দর্শাও নোটিশের পথে হাটলে মেয়েরা আরো কঠোর সিদ্ধান্তের দিকেও যেতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মেয়ে ফুটবলার বলেছেন, “আমাদেরকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা এটাও জানি, বাফুফে হয়তো আমাদের কারণ দর্শাও নোটিশ দেবে। কিন্তু আমরা চিন্তা করছি গণহারে অবসরে চলে যাওয়ার। এটা ছাড়া কোনও পথ দেখছি না।” এরপর নিজেদের অবস্থান নিয়ে তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, “আমরা এই দেশকে সাফ শিরোপা উপহার দিয়েছি দুইবার। আমাদের পছন্দ-অপছন্দের কি কোনও মূল্য থাকবে না? যে কোচের সঙ্গে আমাদের ঝামেলা হয়েছে, তাকে আমরা চাইছি না, এই তো।”
টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জিতে এই মেয়েরা তেমন কিছু পায়নি বাফুফে থেকে। ফেডারেশনের বাইরে থাকা অনেক প্রতিষ্ঠান অভিনন্দন জানিয়ে তাদের হাতে অর্থ পুরস্কার তুলে দিলেও এখনও বাফুফে দিতে পারেনি। বাফুফে প্রতিশ্রুত দেড় কোটি টাকার বোনাস এখনও পাননি সাবিনা-মনিকারা। ৮টি আন্তর্জাতিক ম্যাচের ম্যাচ ফি পায়নি মেয়েরা। তাছাড়া সাফ জয়ের পরের মাস অর্থাৎ নভেম্বর থেকেই তারা বেতন পাচ্ছেন না বাফুফে থেকে। বেতনের চুক্তি নাকি গত অক্টোবরেই শেষ হয়ে গেছে। বিজয়ের মূল্য এভাবেই দেয় বাফুফে!