Beta
সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫

হাসিনার বিচারের আগে ভোটের কথা শুনব না : সারজিস

sarjis
[publishpress_authors_box]

রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে এলেও তাদের প্রতি ভিন্ন বার্তা দিলেন অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতা থেকে এখন নতুন দলে দায়িত্ব পাওয়া সারজিস আলম।

তিনি বলেছেন, “খুনি হাসিনাকে যতদিন ফাঁসির মঞ্চে না দেখছি, ততদিন এই বাংলাদেশে কেউ যেন ভুলক্রমেও নির্বাচনের কথা না বলে।”

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আত্মপ্রকাশের তিন দিন পর মঙ্গলবার প্রথম দিনের কর্মসূচি পালনের সময় সাংবাদিকদের একথা বলেন দলটির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে উৎখাৎ হওয়ার পর দায়িত্ব নিয়ে সংবিধানসহ নানা ক্ষেত্রে সংস্কারকে অগ্রাধিকার নিয়ে কাজ শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার।

তবে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের ওপর জোর দিচ্ছে। তাদের তাগিদে আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের কথা এরই মধ্যে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এদিকে অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে নির্বাচনের আগে সংবিধান পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন। মঙ্গলবার তাদের প্রথম কর্মসূচিতে ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়ার পর দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথায় তার ওপরই জোর দেন।

স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরে রায়েরবাজার কবরস্থানে অভ্যুত্থানে নিহতদের কবর জিয়ারতের পর দলের মুখ্য সংগঠক সারজিস জোর দেন শেখ হাসিনার বিচারে।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ক্ষমতায় টিকে থাকতে হাসিনা আমাদের অনেক ভাইকে খুন করতে দ্বিধা করেনি। অনেক লাশ সে কোথায় রেখেছে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। সন্তানের লাশ পাওয়ার জন্য একটি মা আহাজারি করছে সন্তানকে শেষবার দেখার জন্য।

“এই খুনির নির্দেশে আমার ভাই প্রাণ হারালো, তার বিচার না হওয়া পর্যন্ত কীভাবে আমরা অন্যকিছু চিন্তা করি?”

রায়েরবাজার কবরস্থানে অভ্যুত্থানে নিহতদের কবর জিয়ারত করে এনসিপির সদস্যরা।

গত জুলাইয়ে চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা সরকারের পদক্ষেপ পরিস্থিতি সহিংসতার দিকে নিয়ে যায়। কয়েকশ মানুষের মৃত্যুর পর তা অভ্যুত্থানে রূপ নেয়।

সেই আন্দোলনে মোট নিহতের সংখ্যা ৮৩৪ উল্লেখ করে তাদের নামসহ গেজেট গত জানুয়ারিতে প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তবে সংখ্যাটি আরও বেশি বলে দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের। তাদের হিসাবে আহতের সংখ্যা অন্তত ২২ হাজার।

সেই আন্দোলনে প্রাণ হারানো এক যুবকের অভিভাবক মঙ্গলবার নাহিদ-সারজিসদের আসার খবরে রায়েরবাজারে আসেন, তার আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে চারপাশ। তাকে স্বান্তনা দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সারজিস।

তিনি বলেন, “খুনি হাসিনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত যেন বাংলাদেশের কোনও মানুষ, কোনও রাজনৈতিক দল অন্য কোনও বিষয় নিয়ে কথা না বলে। আগে খুনি হাসিনার বিচার হতে হবে, তারপর বাংলাদেশ অন্য কোনও কিছু চিন্তা করবে।”

জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার উদ্যোগ এরই মধ্যে নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গণহত্যার মামলার আসামি করা হয়েছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের মন্ত্রীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং তার দল আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতাদের।

ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, “২০২৫ সাল হবে আওয়ামী লীগ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বছর। বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে সংগঠিত গুম, খুন এবং জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার এই বছরেই সম্পন্ন হবে।”

যদি অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকালে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ না হয়, তাহলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টা বৈধতা হারাবেন বলে মন্তব্য করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সারজিস।

সাবেক আরেক সমন্বয়ক এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, “আন্দোলনে শহীদ পরিবারের আকাঙ্ক্ষা আমরা বারবার সরকারের কাছে তুলে ধরেছি। যদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে শহীদ ও আহতদের বিচার পাওয়া নিশ্চিত করা না হয়, তাহলে তাদের এই কান্না ক্রোধে পরিণত হবে।”

এই বিচার দীর্ঘায়িত করতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র সক্রিয় রয়েছে বলে সরকারকে সতর্ক করেন তিনি। “আমরা এখনও বিচারের কোনও দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখছি না, যা আমাদেরকে খুব আশাহত করছে। আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত না করতে পারলে আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকারের) পুরো প্রক্রিয়াই প্রশ্নবিদ্ধ হবে,” বলেন হাসনাত।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত