জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরিতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য সর্বদলীয় বৈঠকে গেছে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল।
বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকার ফরেইন সার্ভিস একাডেমিতে এই বৈঠকে তাদের সঙ্গে বসেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে যোগ দিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিত্ব করছেন সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।
ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আতাউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব আশরাফুল আলম গেছেন বৈঠকে। খেলাফত মজলিসের প্রতিনিধিত্ব করছেন দলটির মহাসচিব আহমেদ আব্দুল কাদের।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নূরুল হক নূর বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। বাসদের (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা গেছেন বৈঠকে।
বৈঠকে অংশ নিতে ফরেইন সার্ভিস একাডেমিতে আরও ঢুকতে দেখা গেছে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুমকে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হুসেইন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ বৈঠকে যোগ দিয়েছেন।
আমন্ত্রণ পেয়েও এই বৈঠকে যায়নি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি। দলটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, দেরিতে জানানো হওয়ায় তারা বৈঠকে অংশ নিতে অপারগতা জানিয়েছেন।
“আজকে দেড়টার সময় আমরা খবর পেয়েছি। মাহফুজ আলম হোয়াটস অ্যাপে মেসেজে জানিয়েছে। ঘোষণাপত্রের ড্রাফটা পাঠিয়েছে। কিন্তু এত কমসময়ে কীভাবে পর্যালোচনা দেওয়া যায়। আমাদের দলের ভিতরে আলোচনা বাদে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামত দেওয়া যায় না। তাই আমরা আজকে যাচ্ছি না।”
প্রিন্স আরও বলেন, “যদি আলোচনা করে মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকে আমরা নিশ্চয়ই দেব। আমাদের দলের ভেতরে বাম জোটের মধ্যে আলোচনা করে তো মতামত জানাব। আজকের সভার ফলাফল দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”
বামজোটের বর্তমান সমন্বয়ক বাসদ মার্ক্সবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানার সভায় অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে সিপিবি সভাপতি বলেন, “সবাইকে দল হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ফলে, সে সেখানে তার দলের প্রতিনিধি হিসাবে গিয়েছেন। জোট হিসাবে না।”
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে আটটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের বৈঠকে ঢুকতে দেখা গেছে।
এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। বৈঠকে আরও কয়েকজন উপদেষ্টাও থাকছেন।
গত বছরের মাঝামাঝিতে যে অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটেছিল, তার একটি ঘোষণাপত্র তৈরিতে এই বৈঠক।
অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গত ২৯ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন ডেকে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ উপস্থাপনে ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে সমাবেশ ডেকেছিল।
তবে না নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারাই জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরি করবে।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া তৈরি করেছিল। তার ওপর ভিত্তি করেই সরকার ঘোষণাপত্র তৈরি করছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, “সবাই ঘোষণাপত্রের ব্যাপারে একমত। ঘোষণাটি কবে এবং ভেতরে কী কী কনটেন্ট থাকবে- তা নিয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছতে পারিনি। আগামী বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় একটি বৈঠক হবে। আমরা আশা করি, আগামী বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ঐকমত্যের মধ্য দিয়ে দলিলটি প্রণীত হবে।”