Beta
বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫

পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে বিশ্বনেতাদের সহায়তা চাইলেন ড. ইউনূস

সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক বৈঠকে আসিয়ান নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি পিআিইডি
সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক বৈঠকে আসিয়ান নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি পিআইডি
[publishpress_authors_box]

আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনকালে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়েছে, তা উদ্ধারে বিশ্বনেতাদের সহায়তা চেয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে যোগ দিতে এখন সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনায় তিনি এই সহায়তা চান বলে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেসসচিব আজাদ মহুমদারকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে বাসস।

প্রধান উপদেষ্টা জার্মানির ফেডারেল চ্যান্সেলারির প্রধান ও বিশেষ কার্যাদি বিষয়ক মন্ত্রী উভফগ্যাং স্মিডট, ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লগার্ড, বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপে, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা, সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল পররাষ্ট্র বিভাগের ফেডারেল কাউন্সিলর ইগনাজিও ক্যাসিস, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই সংস্কৃতি ও শিল্প কর্তৃপক্ষের চেয়ারপারসন শেখ লতিফা বিনতে মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেদি, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রাক্তন মার্কিন বিশেষ দূত জন কেরি এবং সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারে সঙ্গে বৈঠক করেন।

বাসস জানায়, বুধবার ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে ক্রিস্টিন লগার্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন ড. ইউনূস।

বৈঠকে তিনি বলেন, স্বৈরাচারী শাসকের ঘনিষ্ঠ ধনকুবেরা শুধু দেশের ব্যাংক খাত থেকে প্রায় ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার করেছে এবং শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে প্রতি বছর ১৬ বিলিয়ন ডলার করে দেশ থেকে পাচার হয়েছে।

একে ‘বিশাল ডাকাতি’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “প্রথমে এসব ধনকুবেররা ব্যাংক দখল করে নেয় এবং পরে যে ঋণ নিয়েছে, তা আর পরিশোধ করেনি।”

এই অর্থ উদ্ধারে সহায়তা চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে লগার্ড বলেন, বাংলাদেশ এই অর্থ পুনরুদ্ধার ও দেশে ফেরানোর জন্য আইএমএফের সাহায্য নিতে পারে।

সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লগার্ডের সঙ্গে বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি পিআইডি
সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লগার্ডের সঙ্গে বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: পিআইডি

আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনকালে বাংলাদেশে কীভাবে অর্থ লুটপাট হয়েছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য বাংলাদেশে শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে পাঠাতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান ড. ইউনূস।

এসব বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সচিব লামিয়া মোর্শেদ এবং জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক আরিফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

লুৎফে সিদ্দিকী জার্মান মন্ত্রী উলফগ্যাং স্মিডটকে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে সরকারের প্রচেষ্টা সম্পর্কে জানিয়ে বলেন, সরকার এই বিষয়ে একটি সম্পদ পুনরুদ্ধার কমিটি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে।

তিনি বলেন, সরকার প্রাথমিকভাবে শীর্ষ ২০ জন অর্থ পাচারকারীকে তাদের চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে চিহ্নিত করেছে।

দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস জার্মান মন্ত্রীকে বলেন, “আমরা যখন নতুন বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলি, তখন আমরা পরিষ্কার বাংলাদেশের কথাও বলি।”

সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে কান্ট্রি স্ট্যাটেজি ডায়ালগে ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি পিআইডি
সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে কান্ট্রি স্ট্যাটেজি ডায়ালগে ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: পিআইডি

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা এবং পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের পরিকল্পনা সম্পর্কে বিশ্বনেতাদের জানান বলে বাসস জানিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিনাওয়াত্রার সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট এবং জাহাজ চলাচলসহ অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, “আমরা রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত সমাধান করতে চাই। কারণ আরও বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে।”

প্রধান উপদেষ্টা থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে ‘থ্রি জিরো’ ধারণা সম্পর্কে অবহিত করেন, যার লক্ষ্য দারিদ্র্য, সম্পদের ঘনত্ব, বেকারত্ব এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করে আত্ম-ধ্বংসী সভ্যতাকে উদ্ধার করা।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ৫৮টি দেশে প্রায় ৫০০০ ‘থ্রি জিরো’ ক্লাব রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশকে আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের একটি সেক্টরাল সংলাপ অংশীদার হতে এবং ফলস্বরূপ সংস্থার পূর্ণ সদস্য হতে থাইল্যান্ডের সমর্থন কামনা করেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত